ষ্টাফ রিপোর্টার (খুলনা): খুলনার কয়রা উপজেলায় দীর্ঘ এক যুগ পর জামায়াতে ইসলামীর এক কর্মী হত্যার ঘটনায় সাবেক এমপি, আইনজীবী,ছয় সাংবাদিকের নামে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) জামায়াত কর্মী নিহত জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ছবিরন নেছা বাদী হয়ে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলার আবেদন করেন।
আদালত শুনানি শেষে আবেদনটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে কয়রা থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কয়রা থানায় নথিভুক্ত করতে আদেশ দেন। এ মামলায় খুলনা-৬ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য, আইনজীবী , আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছয় সাংবাদিককেও আসামি করে ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পাশ্ববর্তী দেশে নিরাপদে চলে যান,তারপর থেকে একের পর এক মিথ্যা হয়রানি মুলক রাজনৈতিক মামলা কয়রা উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের নামে চলমান রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কর্মীরা তেমন নেই বললেই চলে। তার পর ও মামলা চলমান প্রক্রিয়া চলছে,
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন— খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এ্যাডঃ সোহরাব আলী সানা সিনিয়র সহ-সভাপতি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ, আক্তারুজ্জামান বাবু, কয়রা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক নিশিথ রঞ্জন মিস্ত্রী ,সহ সভাপতি আবদুস সাত্তার পাড়, সিনিয়র সহ-সভাপতি গাজী আজিজুল হক , কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমীর আলী গাইন , উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাষ্টার কফিল উদ্দিন,উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম পাড়, সহ আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ,সহ কয়রা উপজেলা সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট কেরামত আলী,এ্যাডঃ কমোলেশ কুমার সানা, এ্যাডঃ আরাফাত হোসেন, এ্যাডঃ আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
ছয় সাংবাদিক হলেন দৈনিক ভোরের কাগজের কয়রা প্রতিনিধি শেখ সিরাজুদ্দৌলা লিংকন, কয়রা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, দৈনিক যায় যায় দিনের মাস্টার হাবিবুর রহমান ,দৈনিক কালের কণ্ঠ ও পূর্বাঞ্চলের ওবায়দুল কবির সম্রাট, দৈনিক খুলনা অঞ্চলের শাহাজান সিরাজ, আজকের দর্পণের তারিক হাসান লিটু
এ অবস্থায় গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়াতে পরিবার ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই ছয় সাংবাদিক সহ আইনজীবী । এতে করে একদিকে তাদের পেশা হুমকির মুখে পড়েছে, অন্যদিকে তাদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভুক্তভোগী এসব পরিবারের সদস্যরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আইনজীবীগন এসব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হত্যা মামলায় সাংবাদিকদের নাম আসায় কয়রা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সাংবাদিক নেতারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা থেকে পেশাদার সাংবাদিকদের অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের উদ্যোগে কয়রা সদরে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার জালালের মোড়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্বে হামলা হয়। হামলায় কমপক্ষে ২৯ জন আহত হন। এর মধ্যে মামলার বাদীর স্বামী জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
সে সময় আহতদেরও হাসপাতালে নিতেও বাধা দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
মামলার ৩৯ নম্বর আসামি কালের কণ্ঠের সাংবাদিক ওবায়দুল কবির সম্রাট বলেন, ‘২০১৩ সালের হত্যা মামলার এজাহারে তার নাম দেখে তিনি হতবাক। তিনি বলেন, সে সময় আমার বয়স ১৬ বছর, তখন আমি একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমি কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম দিয়ে হয়রানি করছে একটি মহল। বিগত সরকারের আমলেও তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
মামলার ৫২ নম্বর আসামি কয়রা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় আমি খুলনা জেলা শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মামলায় আমার নাম থাকা টা বিব্রতকর।’
মামলার বাদী ছবিরন নেছা জানান, তাঁর স্বামী জাহিদুল ইসলাম দিনমজুরির কাজ করতেন। তার স্বামীর মৃত্যুতে তাদের পরিবারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আগে মামলা করতে সাহস পাননি বলে স্বামী হত্যার বিচারের দাবিতে মামলাটি করেছেন এখন।
মামলায় সাংবাদিকদের নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্থানীয় রাজনৈতিনক ও জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শে মামলা করেছেন। কে সাংবাদিক কে রাজনৈতিক নেতা তিনি অধিকাংশ মামলার আসামিদের চেনেন না। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে মুঠোফোনে জানান।
দৈনিক জন্মভূমির কয়রা উপজেলার সাংবাদিক
হারুনর রশিদ বলেন, কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ হলে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ থাকলে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়াটাই স্বাভাবিক। এবং সেটা তদন্তের ভিত্তিতে আমলে নিতে হবে , তাই বলে হঠাৎ করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ